শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ফুলবাড়ীতে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে স্মরণ সভা অনুষ্টিত সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় টাংগাইলের মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিহত রাজশাহী নগরীতে ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর রায়গঞ্জে ভূঁইয়াগাঁতী বাসস্ট্যান্ড দখল করে অবৈধ দোকানপাট ও সিএনজি স্ট্যান্ড নড়াইলে চিত্রশিল্পীদের হাতে চিত্রকর্মের সম্মাননা স্মারক প্রদান নড়াইলে পৃথক অভিযানে একাধিক মামলায় দুই সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার শিল্পী সমিতির নির্বাচন : সভাপতি মিশা, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল রাজশাহী নিউ মার্কেটের দোকানে অগ্নিকাণ্ড পাইকগাছায় ইউএনও’র হস্তক্ষেপে বাল্যবিবাহ বন্ধ ছাতকের জাউয়া বাজারসহ তার আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

মাটির ব্যাংকে সঞ্চয়

চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস :

শস্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ।গ্রামের মানুষরা ফসলের মাঠে কাজ করে।প্রাকৃতিক পরিবেশে ভাটিয়ালি গান স্বরচিত বাংলা গান গায় এবং মনের আনন্দে কাজ করে।যখন ফসলে ভরে ওঠে মাঠ কৃষকের মন আনন্দে নেচে ওঠে।ফসল বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা থেকে কিছু অর্থ সঞ্চয় করেন।ছেলে মেয়েকে উপযুক্ত ভাবে শিক্ষিত করার জন্য।এবং সন্তানদের চাকরি বিয়ের জন্য ব্যাপক অর্থের প্রয়োজন হয়।ছোট খাটো পরিবারের অর্থ সম্পদ পর্যাপ্ত থাকে না।তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একটু একটু করে অর্থ সঞ্চয় করে।বাড়িতে চোর ডাকাতের হাত থেকে বাঁচতে সঞ্চিত অর্থ ব্যাংকে রেখে আসে।কিন্তু ব্যাংক যদি তার সেই কষ্টের সঞ্চিত অর্থ থেকে বছর বছর একটা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ কেটে নেয় তাহলে সাধারন মানুষ কোথায় যাবে।এতদিন তারা ব্যাংকের উপর নির্ভরশীল হয়ে চলে আসছিল।কিন্তু এখন তাদের সেই ভরসাও শেষ হয়ে গেছে।বাংলাদেশ সরকার এই দেশকে ডিজিটাল করতে গিয়ে এই গরীবদের স্বপ্ন গুলো ভেঙ্গে দিল।২০১৭ সালের বাজেট অনুসারে গরীবদের মারার সড়যন্ত্রের ফাঁদ না পেতে গরিবদের জন্য বিবেচনা করা উচিত ছিল।বর্তমানে এক কাঠা জমি কিনতে গেলে পাঁচ লক্ষ টাকা সর্বনিন্ম লাগে। এটা চিন্তা করা উচিৎ মানুষ ব্যাংকের আসায় স্বপ্নের ঘর বাধে আর সে স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল সরকার।লাভ তো দুরের কথা আসল টাকাও কমতে থাকবে।তারা এতটা ক্ষমতা অর্জন করে নিয়েছেন যে সরকার যার টাকা তার কাছে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন করেন না তার একাউন্ট থেকে কেটে নিবে সরকার।গরীবদের হাসি কেড়ে নিতে কষ্ট হয়নি তাদের।তারা তো বিলাস বহুল বাড়িতে থাকে, সামনে গেটে দারোয়ান থাকে অস্ত্র নিয়ে।তাদের টাকা ব্যাংকে রাখা প্রয়োজন হয়না বাংকের মতো সিকিউরিটি থাকে।তাই তাদের এমন নিয়ম করতে সমস্যা নেই।তাদের টাকা বিদেশের বাড়িতেও থাকবে।তাতে গরীবদের কি ?গরীব মরলে তাদের তো কোনো সমস্যা নেই।বিদেশে সাহায্যের জন্য আবেদন করতে পারবে।গরীবদের লাশ দেখিয়ে সাহায্য চাইতে পারবে।আমাদের কিছুই করার নাই ডিজিটাল করতে হবে।গরীবদের মেরে সুন্দর পরিকল্পনা তাদের।আমাদের দেশের সব কিছু ডিজিটাল, মানুষ গুলোও ডিজিটাল হয়ে গেছে।তাই এখন থেকে আবার আগের বাঙ্গালীর ঐতিহ্যতে ফিরে যাই মাটির মানুষ আমরা মাটির ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করে সন্তাদের মানুষ করে তোলার অঙ্গীকার করি।তাই আসুন এখন থেকে আমরা মাটির ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করি।ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি। আমি ছবি আঁকি তাই ছবির ভাষাতে বোঝানোর চিন্তা করি।গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, সমতা প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরতে ইচ্ছা পাঠকদের জন্য আমার।

সংক্ষেপে লিখলাম আমি যখন গ্রামে ছিলাম তখন মাটির ব্যাংকে পাঁচ পয়সা, দশ পয়সা,পঁচিশ পয়সা, পঞ্চাশ পয়সা, এক টাকা, দুই টাকা,কিছু দিন পরে এলো পাঁচ টাকা, আর এখন অনেক কিছুই দেখতে পাইনা।হারিয়ে গেছে ছেলে মেয়ে শুনলে কি বলবো জানিনা।আর মানুষ এখন কয়েন রাখেনা কারন ভিকারিদের দিলেও নেয়না কিছু কিনতে গেলে দোকানদারা নেয়না।সরকারের ব্যাংকে কোন লেন দেন করতে গেলে ১০৫১ টাকা জমা দিতে গেলে বায়ান্নো টাকা নিয়ে নেয় আর ফেরত দেয় না, বলে নেই। এমটা শিকার হয়েছি বহুবার। কিছু করার নেই লজ্জা করে চাইনা এখন বলেন ভিকারি কারা।আপনিও এমন পরিস্তিতির শিকার হয়েছেন এটা আমার বিশ্বাস।

উন্নয়ন হয়েছে একথা সত্য যে, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় মাত্রায় উন্নতি করেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক গতি এসেছে, বৈদেশিক মুদ্রার বড় রিজার্ভ সৃষ্টি করা হয়েছ।আমার জীবনের বাস্তব গল্প লিখলামঃআমি তখন খুব ছোট।আমাদের গ্রামে বৈশাখী মেলা বসত। মেলাতে আমার সমবয়সী অনেকেই ঘুরে এসেছে। কে ক’বার গেল, এলো এই বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে গল্প বলার প্রতিযোগিতা চলত।মেলাতে কিছু কিনি বা না কিনি। এমনিতেই যেতাম প্রথম হওয়ার জন্য।শেষ বার মেলাতে প্রবেশ করে একটা জিনিস না কিনে পারলাম না।সেটা হলো কুমারের হাতের তৈরি করা মাটির ব্যাংক।বাড়িতে নিয়ে এলাম ব্যাংকটা।মা ব্যাংকটা দেখেই বলল,যাক আমার ছেলে এবার কাজের মত কাজ করেছে।আমি বললাম, কি এমন কাজে মত কাজ করেছি মা ?

মা বলল, তুমি টাকা সংগ্রহ কর।ব্যাংকটা ভর্তি কর তারপর বলব তুমি কি কাজের কাজ করেছ।ঠাকুরমা বলল, এবার বাড়িতে চোরে উৎপাত বেড়ে যাবে!বললাম কেন?ঠাকুরমা দু’হাত দিয়ে আমার দুই গাল টেনে ধরে বলল,মেলা থেকে ব্যাংকটা বাড়িতে নিয়ে আসতে কত মানুষ দেখেছে? অনেক মানুষতো দেখেছে ঠাকুরমা।ঐ মানুষ গুলোর মধ্যে চোরও দেখেছে। কিছু দিন পর সেই চোর মাটির ব্যাংকটা চুরি করতে আসবে।আমি রেগে বললাম, আমার ব্যাংকের টাকা কে চুরি করবে তাকে দেখে নেব।মাটির ব্যাংক মাটিতেই পুতে রেখে দেব।

ঠাকুরমা বলল, ‘মাটির ভেতর কি চোর নাই।অবাক হয়ে বলাম।মাটির নিচে চোর! কি ভাবে সম্ভব! মাটির নিচে আবার চোর থাকে!ঠাকুরমা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বলল আছে মানে অবশ্যই আছে।জোরে বললাম,বল দেখি সেই চোরের নাম কি?অবশেষে ঠাকুরমা বলল,তার নাম ইঁদুর।ইঁদুরের নাম শোনা মাত্র ভাবলাম সত্যি তো ইঁদুর মাটির নিচেই থাকে।তবু ঠাকুরমা কে বললাম ইঁদুর নরম মাটি কাটতে পারে।কিন্তু শক্ত মাটি কাটতে পারবে না। তারপরও পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি ব্যাংক।ইঁদুরের দাঁত ভেঙে যাবে শক্ত মাটি কামড়াতে।

ঠাকুরমা বলল, আচ্ছা পুতে রাখ দেখা যাক বাস্তবে কি হয়।বাবা বলল,যাক এবার আমার সন্তান বুঝতে পেরেছে ভবিষ্যতের কথা।বাবা আর বেশি কিছু না বলে ধন্যবাদ দিল।বাবা কে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা বাবা মাটির এই ব্যাংকটা এত সুন্দর করে কে তৈরি করেছে? বাবা বলল, পালপাড়ার কুমারেরা। বাবাকে বললাম,নিয়ে চলো না একদিন পালপাড়াতে।বেশ কয়েক দিন পর বাবার সঙ্গে পালপাড়াতে গেলাম।যে দেখি মাটির ঢিবি।কোথায় আবার কাঁদামাটি, চাকা ঘুরছে কলস তৈরি করছে।উচ্চ জায়গায় একটা ঘরে দেখি ধুয়া উড়ছে।আমি বললাম,বাবা ওখানে ধুয়া উঠছে কেন?বাবা বলল, ‘ওখানেই তো মাটির তৈরি জিনিস গুলো আগুনে পড়ানো হচ্ছে।পুরো পালপাড়া ঘুরে এলাম বাড়িতে। এসেই ঠাকুরমা

সঙ্গে গল্প করতে করতে বাজি ধরলাম, হলো আমি যদি এক মাসের মধ্যে মাটির ব্যাংকটা টাকা দিয়ে ভর্তি করতে পারি তাহলে ঠাকুরমা আমাকে পেটভরে মিষ্টি খাওয়াবে। মিষ্টি খাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। কথা দিলাম। কিভাবে টাকা সংগ্রহ করা যায়।ভাবলাম বন্ধু বান্ধবীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিব।পরে শোধ করে দিব।না থাক বন্ধুরাও তো আমার মত ছোট্ট মানুষ। অতিরিক্ত টাকা ওদের ও নেই।হঠাৎ বুদ্ধি পেয়ে গেলাম বাবার পকেট মারা। বাবা অফিস থেকে আসলেই পকেট মানি ব্যাগ যখন যেখানে রাখে সে খান থেকে টাকা সরিয়ে ব্যাংকে ঢুকিয়ে রাখতাম। বাবা ঠিক কি বুঝতে পারত।বুঝে না বোঝার ভান করত। কখনো টাকা গুলো ভাংতি করে কয়েন সংগ্রহ করি দোকান থেকে।ঠাকুরমা কাছে থেকে ও যে কোন ভাবে টাকা সংগ্রহ করি। মা তো চুপি চুপি আমাকে টাকা দেয়।

সব মিলে এক মাসের দু’দিন বাকী থাকতেই মাটির ব্যাংকটা ভর্তি হয়ে গেল।পরের দিন সকালে ঘোষণা দিব আমার ব্যাংকটা ভর্তি হয়েছে।কিন্তু সে ভাগ্য আর আমার হলো না।সকালে ব্যাংকটা যে জায়গা রেখে ছিলাম দেখি সে জায়গায় আর নেই।ঠাকুরমা.বলল, তোকে না বলে ছিলাম। ইঁদুর মাটির নিয়ে যেতে পারে।মা কোলে তুলে আদর করতে করতে বলল, কান্না করে না। সোনার টাকায় ভর্তি মাটির ব্যাংক এনে দেব।বাবা বলল, তোমাকে আবার পালপাড়াতে নিয়ে গিয়ে ব্যাংক কিনে এনে দেব।সবার কথা শুনে কান্না থামিয়ে চোখ মুছতে বললাম, মাটির ব্যাংকটি তো গেছে যাক। কিন্ত টাকাগুলো তো নষ্ট করে ফেলেছে ইঁদুর। সে টাকা গুলো কি হবো। টাকা গুলো তো তোমাদের কাছে থেকেই সংগ্রহ করে ছিলাম।ইঁদুর তো দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে।কিন্তু কথা সেটা না।কথা হলো আমি যে সঙ্গে বাজিতে হেরে গেলাম।এতো কষ্ট করে ঠাকুরমা খাটিয়ে মাটির ব্যাংকটা ভর্তি করেছিলাম অবশেষে হেরে গেলাম !হারানোর বেদনায় আবারও জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম …

আমার কান্না দেখে ঠাকুরমা দৌড়ে রুমে গেল।ফিরে এসে শাড়ির আঁচলের নিচে থেকে ব্যাংকটা বের করে বলল, তুই হেরে যাস নি দাদু ভাই এই তো তোর টাকা ভর্তি মাটির ব্যাংক।মায়ের কোল থেকে লাফ দিয়ে নেমে মাটির ব্যাংকটা হাতে নিলাম।ব্যাংকটা হাতে পাওয়ার পর মনে হলো আমি যেন এভারেস্ট জয় করে ফেললাম।জোরে চিৎকার দিলাম।আমি জিতেছি।দাদীমা হেরে গেছে। লকি মজা কি মজা উপস্থিত সবাই আমার আনন্দে হাসতে লাগল।।মাটির ব্যাংক সম্বল হলে ও লক্ষ্য স্বপ্নের মুকুট।ছোট ছোট মাটির ব্যাংক, যেখানে অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তির নিয়তে অর্থ দান করেন।

লেখার মাঝে ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। সকল পাঠকদের জন্য শুভকামনা করি।

লেখক পরিচিতিঃ

প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক-খুলনা আর্ট একাডেমি

রচনা কালঃ১২-০৬-২০১৭


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 + nine =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x