সাম্প্রতিক সময়ে যে রোগটি জাতীয় জীবনে ভয় সৃষ্টি করেছে সেটি হলো ডেঙ্গুজ্বর।ডেঙ্গু নামক ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে ক্লাসিক্যাল ধরনের তীব্র জ্বরকেই ডেঙ্গুজ্বর বলে।
এটি রোগীর জন্যে তীব্র কষ্টদায়ক এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণু বহনকারী মশাটির নাম এডিস মশা।সাধারণত এইটি দুই প্রজাতীর।এর একটি প্রজাতির নাম এডিস এজিপটাই ও অন্যটির নাম এডিস এবললাপিকটাস।
দেশে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এবং ২০২২ সালে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর রেকর্ডে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক। এ বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দেখাতে পারি যে বর্তমান বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ ১৮২ জন মারা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে এবং ৪৪ হাজার ৮০২ জন আক্রান্ত হয়েছে।
২০২১ সালের আগে ২৮ হাজার ২৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং ১০৫ জন মারা গিয়েছিল। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১৭৯ জন মারা গিয়েছিল এবং ১০ হাজার ১৩৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছিল।
২০০০ সালে ৯৩ জন মানুষ মারা গিয়েছিল এবং ৫ হাজার ৫৫১ এ প্রভাবিত হয়েছিল চার বছর পর এই রেকর্ড ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ৩ হাজার ৯৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। এমনকি ২০০৮ ও ২০১২ সালে মানুষ মারা গিয়েছিল মাত্র ১ এবং আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৮৩৪ জন।
অবশেষে, আমরা দেখতে পাচ্ছি।যে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে এবং দিন দিন মৃত্যু হচ্ছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে গােটা বিশ্বে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় দুই কোটি মানুষ।
সাধারণত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে মাংপেশি ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। দেহের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রিতে উঠে যায়। মাথা ও চোখের মাংসপেশি ব্যথা, বমি বমি ভাব, বিষন্নতার ছাপ এবং দেহে এক ধরনের ফুসকুড়ি ওঠে। কখনাে কখনাে মাংসপেশির খিচুনিতে রােগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। শিশু-কিশােররা এ জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশি। ভয়াবহ ডেঙ্গুজ্বরের কোনাে চিকিৎসা নেই।নেই প্যাটেন্টকৃত কোনাে ওষুধ।উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করতে হয়।রােগীকে পুরােপুরি বিশ্রামে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিলে রােগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
ডেঙ্গু জ্বর মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে। সারা শীতে এই জ্বর পরিলক্ষিত হয় না। শীতকালে, ডেঙ্গু মশার লার্ভা স্টেজ দীর্ঘ সময়ের জন্য সহ্য করতে পারে। তারা বর্ষা শুরুর সময় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ছড়ায়। ডেঙ্গু রোগ এড়ানোর চাবিকাঠি হল এডিস মশার বিস্তার এবং তাদের কামড় নিয়ন্ত্রণ করা। এডিস হল এক ধরণের মশা যা সমৃদ্ধ স্থানে বিশাল, আকর্ষণীয় কাঠামোতে বাস করে। এই পোকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তারা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি অপছন্দ করে। ডেঙ্গু এড়াতে, এডিস মশা যেখানে ডিম পাড়তে পারে সেসব জায়গা পরিষ্কার রাখা এবং পোকামাকড় নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
আমাদের বাড়ির চারপাশে ঝোপঝাড়, বন, জলাশয় ইত্যাদি থাকা উচিত এবং তা পরিষ্কার রাখা উচিত। যেহেতু এডিস মশা মূলত তার ডিম পাড়ে যেখানে পরিষ্কার পানি জমে, তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত বালতি, ক্যানের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। খোলা পানির ট্যাঙ্ক, ফুলের টব ইত্যাদি ব্যবহৃত জিনিসপত্রে যাতে পানি না জমে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আপনি যদি দিনের বেলা ঘুমান, আপনার মশারি বা কয়েল লাগিয়ে ঘুমানো উচিত।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সব সময় মশারির নিচে রাখতে হবে যাতে কোনো মশা রোগীকে কামড়াতে না পারে। মশার কামড় এড়াতে মশা তাড়ানোর স্প্রে, কয়েল, ম্যাট এবং মশারি ব্যবহার করার পাশাপাশি দিনরাত ব্যবহার করতে হবে।ডেঙ্গু জ্বর নির্মূল হতে পারে বা নাও হতে পারে। কোনো ভ্যাকসিন বের হয়নি,কোনো কার্যকর ওষুধও নেইডেঙ্গু জ্বরের মশা আমাদের দেশে আগেও ছিল,এখনও মশার বংশবৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির পরিবেশ রয়েছে।তাই ডেঙ্গু জ্বর ভবিষ্যতেও চলবে।শুধুমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই বেঁচে থাকা সম্ভব।
লেখা:
সুজন সরকার
শিক্ষার্থী – কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।