বরগুনার আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের অভ্যান্তরিণ দ্বন্দ ও হাতাহাতিতে অধ্যক্ষসহ উভয় পক্ষের তিন আহত হয়েছে।
অধ্যক্ষ উপরে হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবী করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, আমতলী বকুল নেছা মহিলা ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ ও বেতনভাতাদি নিয়ে ওই কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।
ওই বিরোধ দেশের সবোর্চ্চ আদালত পর্যন্ত গিয়ে পৌছাইছে।যার ধারাবাহিকতায় ওই কলেজের শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে একটি ভুয়া, মিথ্যা, বানোয়াট, হায়রানী মূলক জাল সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করে।উক্ত মামলা ভুয়া ও ভিত্তিহীন হওয়ায় মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটি স্থগিত করে দিয়ে বাদী মোঃ মজিবুর রহমান ভিত্তিহীন মামলা করায় তার উপর রুল জারি করেন (রীট মামলা নং ১৩৯৩৬/২০২৩)।
গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকুকে ওই কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগ করেন।ওই সময় তিনি কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সীটে স্বাক্ষর না করায় তখন হাইকোর্টে রীট করে অধ্যক্ষ ও উপজেলা নির্কাহী অফিসারের যৌথ স্বাক্ষরে বেতস ভাতা উত্তোলণ করা হয়।এরপর ওই কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ৩০ জানুয়ারী ২০২২ খ্রীঃ ওই কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়াকে পরিবর্তন করে তার ভাইয়ের স্ত্রী মোঃ ফেরদৌসি আক্তারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবী করে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টে (২৭০৩/২০২১ইং) দাখিল করেন।যা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে শুনানী শেষে সরাসরি জৎলবপঃবফ করে দেয়া হয়।এতে মোঃ ফোরকান মিয়াই ওই কলেজের বৈধ অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।কিন্তু কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির অনুসারী ওই কলেজের কিছু শিক্ষক-কর্মচারীরা অধ্যক্ষের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে আসছে।
সভাপতি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সীটে প্রতি স্বাক্ষর না করায় গত ৭ মাস পর্যন্ত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন ভাতা পাচ্ছেন না।
বর্তমান অধ্যক্ষের অপসারণ ও বেতন ভাতার দাবীতে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনুসারী শিক্ষক- কর্মচারীরা বৃহস্পতিবার (২৫ মে সকাল ১০টার দিকে কলেজের সম্মুখে অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া মানববন্ধন করতে চাইলে ওই কলেজের অধ্যক্ষপন্থি শিক্ষকরা এতে বাঁধা দেয়।এ নিয়ে উভয় পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়।
এক পর্যায়ে সভাপতিপন্থি শিক্ষক মোঃ জয়নুল আবেদীন, প্রদর্শক হোসাইন আলী কাজী, মোসাঃ ফেরদৌসি আক্তার, মোঃ মজিবুর রহমান, বশির আহম্মেদ, অলি আহম্মেদসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার উপরে আক্রমন করে কিল-ঘুষি মারে তাকে আহত ও লাঞ্চিত করে।ওই ঘটনার পর অধ্যক্ষপন্থি শিক্ষকরাও সভাপতিপন্থি শিক্ষকদের উপড় চরাও হলে অধ্যক্ষসহ উভয় পক্ষের তিন আহত হয়।
আহতরা হলেন অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া, শিক্ষক মোঃ জয়নুল আবেদীর (কৃষি) ও নাইটগার্ট মোঃ বাবুল মিয়া।
ওই ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়া সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
তিনি লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, সভাপতি তার ভাইয়ের স্ত্রী মোসাঃ ফেরদৌসি আক্তারকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বানানোর জন্য শিক্ষকদের মধ্যে গ্রপিং সৃষ্টি করে, বেতন সীটে প্রতি স্বাক্ষর না করে ও কলেজের মধ্যে বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি করছেন।
শিক্ষক মোঃ জয়নুল আবেদীন, হোসাইন আলী কাজী, ও বশির আহমেদ স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নিয়মিত কলেজে ক্লাসে আসেন না, মাঝে মাঝে আসলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান।তাদেরকে বারবার ক্লাস করা ও শিক্ষার পরিবেশ বজার রাখার জন্য অনুরোধ করলে তাহারা আমাকে উল্টো ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করেন।আজকে তাদের মাধ্যমেই ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।আজকে এরাই আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে লাঞ্চিত করেন।আমাকে মারধর করার সময় কলেজের নাইটগার্ট মোঃ বাবুল মিয়া এগিয়ে আসলে তাকেও তারা মারধর করে।বাবুল মিয়াকে মারধর করতে দেখতে পেয়ে বাবুলের ছেলে মোঃ মেহেদী তার বাবাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসলে তাকে মারধর করে বহিরাগত বলে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত শিক্ষক- কর্মচারীর অশালীন উচ্চবাচ্য আচার-আচারণ, বেপরোয়া চলাফেরা কলেজে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করছে।আমাকে মারধর করতে দেখে কলেজের ছাত্রীরা ভয়ে ক্যাম্পাসে ছোটাছুটি করে ও ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে।আমি ওই ঘটনায় জড়িত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের উচ্চমহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলেজর শিক্ষক মোঃ বাছির উদ্দিন সহ অধ্যাপক (হিসাববিজ্ঞান), মোঃ কবির হোসেন সিনিয়র প্রভাষক (ব্যবস্থাপনা বিভাগ), মোঃ মাকসুদুর রহমান সিনিয়র প্রভাষক (হিসাববিজ্ঞান), মোঃ আব্দুল জলিল প্রভাষক (রসায়ন), আবুল বাশার মোহাম্মদ ফোরকান প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা), মোঃ নজরুল ইসলাম প্রভাষক (সমাজকর্ম), মোঃ নুরুল আমিন তালুকদার প্রভাষক (ভূগোল), আহসান হাবিব প্রভাষক (উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন), মোঃ আবুল হোসাইন প্রভাষক (আরবি), মোঃ বাবুল মিয়া (নৈশ প্রহরী), মোঃ সোহরাব হোসেন (চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী), মোসাম্মৎ রেজিয়া চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী প্রমুখ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।