সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল নাটানা গ্রামে শ্যামল শীলের বসবাস।মা, বাবা ভাইও ঠাকুরমা কে নিয়ে ছিল শ্যামল দের পরিবার।
শ্রী নরেন শীল ও সরস্বতী শীলের জৈষ্ঠ্য পুত্র।গোত্রে প্রমানিক হলে ও নরেন শীল চুল কাটা পেশা বেছে নেননি।কারন তার উপর সংসারের সমস্ত ভার ছিল।অন্য দিকে সরস্বতী শীল গৃহনী হয়ে ও তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসারে হাল ধরার চেষ্টা করেন।এভাবে তাদের সংসার চলতে থাকে।
শ্যামল শীল ১৯৯৬ সালের ১১ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার দেবী শহর গ্রামে (মামার বাড়িতে) জন্মগ্রহন করেন।শ্যামল শীল ৬ বছর বয়সে নাটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি হন।তার পর তিনি ২০১৪ সালে এইচ,এন,এস,কে,টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাটিক পাশ করেন।তিনি ২০১৬ সালে আশাশুনি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।
শ্যামল শীল যখন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন, তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার স্বপ্ন নিয়ে সাতক্ষীরা প্যারাগন কোচিং এ এ্যাডমিশন এর জন্য ভর্তি হন।তখন কোচিং পরিচালনা করতেন মোতাচ্ছিম বিল্লাহ।কোচিং কৃর্তপক্ষ এর সাহস ও অনুপ্রেনায় এগিয়ে যায়।
তার পিতা ছিল একজন সামান্য দিনমজুর।এক কথায় বলতে গেলে দিন আনা দিন খাওয়া।এমন পরিবার থেকে সে কি ভাবে সে পড়াশুনা করব এমন টা মন্তব্য ছিল তার পিতার।পিতার কথার অবাধ্য হয়ে শ্যামল কোচিং এ ভর্তি হয়ে যায়।অন্যদিকে তার পিতা চড়া সুদে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের লোন নেন।এমন এক সময় শ্যামল ঢাকাতে একাই চলে যায় ভর্তি পরিক্ষা দেওয়ার জন্য।ভগবানের কি অশেষ কৃপা।শ্যামল একা ঢাকা শহরে সেখান থেকে পরিক্ষা দিয়ে সাতক্ষীরা তে চলে আসে।৩ দিন পর তার বি-ধ ইউনিটে রেজাল্ট পাবলিশ হয়।
শ্যামল শীল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ইউনিটে ৬৬ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৮০(স্কোর ছিল ৬৪.১৪) মোধা তালিকা অর্জন করেন।তখন চলমান পত্রিকা কৃতকার্য এর কথা তুলে ধরেও কোচিং সেন্টার থেকে তাকে সন্মামনা দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে শ্যামল শীল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ তম ব্যাচে ভর্তি হয়।এরপর থেকে শ্যামল এর জীবনে শুরু হয় কঠিন বাস্তবতার কষাঘাত।পরিবার থেকে কোনরকম তার লেখা পড়ার খরচ যোগানের কোন সামর্থ্য ছিল না।
শ্যামলের পিতার বসত ভিটাটা (৫শতক) এক মাত্র সম্বল।এমন সংসার থেকে উঠে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীর খুবই কম নজির বিহীন।তখন শ্যামল প্রথম ঢাকা শহরে গিয়েছিল।জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন হল না থাকায় এমন দরিদ্র পরিবরের সন্তানরা লেখা পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।ঢাকা শহরে নিজের থাকা, খাওয়া খরচ টানা টা একটা অনেক কষ্টের।শ্যামলের জীবনে এর ব্যতিকৃম ঘটেনি।অন্য দিকে তার ছোট ভাই স্বপন শীল এর পড়াশুনার খরচ তার বাবা বহন করত।মোট কথা তার পিতার পক্ষে সংসার ও লেখা পড়া বাবদ খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না।এমন কষ্টের ভিতর শ্যামলের পরিবার চলছিল।শ্যামলের বাবার স্বপ ছিল যে তার বড় ছেলে চাকরি পেয়ে এক দিন পরিবারের সব অভাব দূর করবে।কিন্তু তার পিতার স্বপ্ন যেন স্বপ্ন রয়ে গেল।
হঠাত শ্যামলের পিতার ২০১৯ সালে ২১ শে নভেম্বর মাসে ব্রােইন টিউমার এ আক্রান্ত হয়।তখন শ্যামলের পরিবারে অভাব ও শোকের ছায়া নেমে আসল।তখন কোভিড় এর কারনে শ্যামলের লেখা পড়া ব্যাহত হল।শ্যামল টিউশন, সাথে ফ্রি সময় ভিক্টেরিয়া পার্কের সামনে,লক্ষীবাজারে ভ্যান এ করে সবজি বিক্রি ও সাপ্তাহিক গার্মেন্টস কাজ করপ নিজের খরচ বাইর করেছে।তখন শ্যামলের পিতা খুবই অসুস্থ তখন ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারত অথবা ঢাকা তে নিয়ে যেতে বলে।সাতক্ষীরা সুশান্ত ঘোষ ড়াক্তার চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকার কথা বলে।
এ দিকে শ্যামলের পরিবারে খুবই অভাব।এত টাকা কোথা থেকে পাবে।এ নিয়ে শ্যামল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাবার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের জন্য আবেদন করতে থাকেন।এ ভাবে তার পিতার চিকিৎসা চলতে থাকে।
অবশেষে ২০২২ সালে ৭ জুলাই বিকাল ৩:১০ মিনিটে মৃত্যু বরন করেন।মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর।এখান থেকে শ্যামলের উপর মানসিক চাপ শুরু হয়।এক দিকে মা, ভাই ও ঠাকুরমা কে দেখবে।অন্য দিকে শ্যামল ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত।
শ্যামলের ছোট ভাই লেখাপড়ার পাশা পাশি মাছের কাটায় কাজ করেন।অন্য দিকে শ্যামল অভাব এর তাড়নায় তিনি খুব শক্ত হয়ে নিজেকে ধরে রাখলেন।লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পাট টাইম জব করেন।এভাবে চলতে থাকে শ্যামলের জীবন।
অবশেষে তার ঠাকুরমা ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।শ্যামলের পরিবারে একের পর এক শোকের ছায়া নেমে আসে।তারপরও তাকে দমাতে পারেনি।এমন পরিবারও শ্যামলের ভবিষ্যত যেন সুন্দর হয় ও দেশ ও জনগনের সেবায় এগিয়ে যেতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।