শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বগুড়ায় সাবেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেনের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় কাজিপুরে নানা আয়োজনে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা, ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন নওদাপাড়া নিবাসী আনসার আলীর মৃত্যুতে রাসিক মেয়রের শোক র‍্যাব-৫ এর অভিযানে মাদক বিক্রয় ও সেবন করার অপরাধে গোমস্তাপুরে গ্রেফতার ১০ খুলনার ডুমুরিয়ায় প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক শিশুর মৃত্যু শাহজাদপুরে নদী থেকে বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার সাইফুল ইসলামকে ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দেখতে চায় শিবগঞ্জ উপজেলাবাসী নড়াইলে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের র‍্যাঙ্ক ব্যাজ পরালেন এসপি
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

গল্পঃ ভালো মা

মোঃ জাবেদুল ইসলাম

এক গ্রামে এক পরিবারে চারজন সদস্য।বাবা মা, আর এক ভাই, এক বোন।বাবা সরকারি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক।মা গৃহিণী সংসারের কাজ দেখাশুনা করেন।ভাই রিফাত হাসান সবে মাত্র পড়াশোনা শেষ করেছে, তার একটা ভালো চাকরিও হয়েছে।ঢাকায় হেডকোয়ার্টারে পো স্টিং।খুব শীঘ্রই জয়েন করতে হবে রিফাত হাসান কে।বোন সায়মা এবারে বাংলা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

বাড়িতে তাদের আরও কিছু জায়গা জমিও আছে।বাবা সেগুলো শিক্ষকতার পাশাপাশি ক্ষেত মজুরদের সহযোগিতা নিয়ে দেখা শুনা করেন।মা বাড়ির রান্না বান্নার কাজে ব্যাস্ত থাকেন।তবে মা’র বেশ বয়স হয়েছে. এখন আর আগের মত কাজ করতে পারে না।বাবা মা বোন সায়মা সহ বাড়িতে বসে আলোচনা করতেছে।বাবা মা বলছে, রিফাতের পড়াশোনা শেষ।একটা ভালো চাকরিও পেয়ে গেছে সে।এখন একটা ভালো পরিবার ও একটা ভালো মনের মেয়ে দেখে, ওকে বিয়ে দেয়া যেতে পারে।

মা বুঝতে পারে।বিষয় টা মন্দ নয়।ছেলের বয়স হয়েছে।একটা ভালো চাকরিও পেয়েছ।এখন আর ছেলের বিয়ে দিতে দ্বিধা নেই।যতো তারাতারি সম্ভব ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে।আগামী সপ্তাহে ছেলে রিফাত হাসান বাড়িতে আসবে।রিফাত হাসানের মতামত ছাড়া কিছু করা যাবে না।মা বল্লো না, ওর মতামতের একটা বিষয় আছে।সায়েমা বোন ও তাদের বাবা মায়ের মতামতের সাথে এক মত।সায়েমা বোন বললো, ভাইয়ার যদি কোথাও পছন্দ থাকে, তা হলে ওর মতের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা যাবে না।পরে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে।সবাই মিলে তারা রিফাত হাসানের বাড়িতে আসার অপেক্ষায় থাকলো।

দেখতে দেখতে পাঁচ তারিখ এসে গেলো।রিফাত হাসান সকাল আটটায় তাদের বাড়িতে আসলো।কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসে।নতুন চাকুরির নতুন বেতন পেয়েছে রিফাত।সবার জন্য নতুন কাপড়, জুতা, বোনের জন্য হরেক রকম কসমেটিক এনেছে।সকালের নাশতা সেরে নতুন কাপড়, জুতা, বোনের জন্য হরেক রকম কসমেটিক এনেছে, সেগুলো বের করে সবাইকে দিয়ে দিয়ে দিলো।

যার যার চাহিদা অনুযায়ী পেয়ে সবাই খুশি।অমন খুশি আর হয় না।এবার মা বললো, রিফাত বাবা, পড়াশুনাত শেষ, চাকুরীও পেয়ে গেলি,আল্লাহর রহমতে।এবার ভালো একটা বউ নিয়ে আয়।বাড়িতে কাজ করার লোক নেই।আমি এখন আগের মত কাজ করতে অক্ষম।রান্না বান্নার কাজও করতে পারি না।তোর বাবা ও তোর বোনের খাওয়া দাওয়ার ভিষণ কষ্ট হয়েছে।আমরা তোর বিয়ের কথা ভাবছি।যদি তোর কোন মেয়ে পছন্দ থাকে, তাহলে আমাদের বল।আমরা মেয়ের বাবা মা ও তাদের পরিবারের সাথে কথা বলবো।

রিফাত হাসান মায়ের কানে কানে ফিস ফিস করে তার পছন্দ করা মেয়ের নাম, তার পরিবারের সকলের বায়ে ডাটা লিখে দিলো, এবং বললো মেয়ে ১০০% খাঁটি।তোমাদের কারো পছন্দ না হয়ে পারবেনা।বাবা রিফাত হাসানের কথা খুব পছন্দ করেছে।

বায়ো ডাটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো।মেয়ের নাম বাবা মায়ের নাম ঠিকানা দেখে বাবার কেমন যেন পরিচিত লাগলো।বাবা কিছু না ব’লে অন্য কাজে চলে গেলো।

রিফাত তার মা ও বোন সায়মার সাথে কথা ব’লে আবার মা এদিকে দুপুরের খাবার রান্না বান্না কাজে লাগিয়ে থাকে।এর মধ্যে আবার দুইজন নিকট আত্নীয় আসলো তাদের বাড়িতে।আত্নীয়দের সাথে গল্প করে তাদের রিফাতের বিয়ের কথা জানানো হলো এবং তাদের বিয়ে না হওয়া পযর্ন্ত রিফাতের বাড়িতে থাকতে বলা হলো।দুইদিন চলে গেলো।

এদিকে রিফাত কে আাবার ঢাকা যেতে হবে।নতুন চাকরি।সময় অপচয় করা যাবে না।তারাতারি অফিসে ফিরতে হবে।বাবা ও তাদের আত্নীয় দুই জন কে রওনা হলো মেয়ে দেখার উদ্দেশ্য।ঠিকানা অনুযায়ী তারা গিয়ে পৌঁছে গেলো মেয়ের বাড়িতে।মেয়ের বাড়িতে ঢুকে দেখে তারা আগের পরিচিত বন্ধু।খুব ভালো বন্ধু তাঁরা দুই জন, খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আত্নার আত্মা মিল আছে।তারা বাড়ির সবার সাথে কুসল বিনিময় করলো।খাবারের ব্যবস্থা করলো তারা।তারপর আসল কথায় আসলো এবার।দুই পক্ষের লোকজন রাজি হ’য়ে গেলো।ছেলে পক্ষের লোকজন কোন পণ দাবি করলো না, আবার মেয়ে সাজানো গোছানো যা যা লাগবে।সব খরচ বহন করবে ছেলের পক্ষের লোকজন।এতে মেয়ের বাবার আপত্তি আছে ব’লে জানায়। কিন্তু কে শুনে কার কথা।ছেলের বাবা কিছুতেই মেয়ের বাবাকে খরচ করতে দিবে না।

ছেলের বাবার কথা হলো আমার ছেলের বউ মানে আমার মেয়ে।আর তাছাড়া আমরা দুই জন বন্ধু।বন্ধু হয়ে বন্ধুর কাছে টাকা নিব আমি? এটা কখনও হতেই পারে না।কেনা কাটার কাজ সম্পন্ন করা হলো, বিয়ের তারিখ ও সময় চুড়ান্ত করলো।তারা সময় না নিয়ে অতি তারাতারি বিয়ের কাজ সুসম্পন্ন করে বউকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসলো।

মা ও বোন সায়মা নতুন বউ দেখে খুব খুশি।সত্যি! অত্যান্ত সুন্দরী ও মায়াবী বউ।সত্যিই চমৎকার বউ।এমন বউ আর দশ গ্রামে মিলবে না।ছেলের বাড়ির সবাই খুশি মনে নতুন বউকে বরণ করে নিলো।বেশ ভালো ভাবে সুখে শান্তিতে তাদের সংসার জীবন চলতে লাগলো।পরিবারের কারোর সঙ্গে কোন ঝগড়া বিবাদ কখনোই হয় নাই।আনন্দের মধ্যে দিয়ে তাদের সংসার জীবন চলতে লাগলো।

রিফাত হাসান প্রতি মাসে মাসে বেতন হলেই বাড়িতে চলে আসে।বউ, বাবা-মা ও আদরের ছোট বোন সায়মাকেও দেখে।কোন ব্যবধান নাই তাদের মধ্যে।ছুটি শেষ হওয়ায় তারাতারি করে আবার কর্মস্থল ঢাকা চলে যায়।আবার বাড়িতে আসে সময় পেলে।এভাবে চলতেই থাকে।

এর মধ্যে তাদের কোলে একটা একটা সুন্দর ফুট ফুটে ছেলে বাচ্চা আসে।বাচ্চা টা খুব সুন্দর।যেন চাঁদের মতো দেখতে।যে দেখে সে চোখ ফিরায় না।খুবই সুন্দর হয়েছে বাচ্চা টা।মা, দাদা দাদির ও ফুফুর আদর যত্নে বেশ বাড়তে থাকে।দাদা-দাদীর পরামর্শ করে তারা আকিকা করালো।

আমাদের মুসলমানদের ধর্মের আকিকা একটি ফরজ কাজ।এটা আল্লাহ তাআলার হুকুম।একটা ভালো দিন দেখে তারা আকিকার আয়োজন করলো।এতে অনেক আত্নীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব রিফাত হাসানের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করা হয়েছে।তারাও আসলো।বেশ ঘটা করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।বেশ মজা হলো।

নাম রাখা হলো তার স্বাদ, সবাই স্বাদ ব’লে আদর করে চুমু খেয়ে ডাকে স্বাদ, ও স্বাদ, তুমি কেমন আছো বাবা? সবার আদর যত্নে ভালোবাসা পেয়ে স্বাদ বড়ো হয়ে উঠতে লাগলো।হাটা চলা রিতীমত করতে পারে সে সব কথা বলতে পারে সে।

স্বাদের বয়স এখন সারে ৬ বছর হবে।হঠাৎ করে একদিন দুপুর বেলা সবাই বাড়িতে আছেন।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।খাওয়ার সময়ও হয়ে গেল।সবাই এক সংগে খেতে বসলো।সবার খাওয়া শেষ।এরই মধ্যে বউ হার্ট অ্যাটাক করে।সবাই ছুটাছুটি করতে লাগলো।নানান জন নানাভাবে যোগাযোগ করতে লাগলো।ডক্টর আসতে আসতে রোগী মারা গেল।নতুন বউ, অতি অল্প বয়স।গোটা পরিবারে একটা শোকের ছায়া নেমে আসে।এতো ভালো মেয়ে এজনমে আর কয়জন আছে?

সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেন।বিশেষ করে ছোট্ট খোকা বাবা স্বাদের জন্য আরও বেশি কষ্ট পেতে লাগলো।ছোট মানুষ।মা ছাড়া থাকবে কেমন করে।

রিফাত হাসান মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলো।এতো প্রিয় ভালো বাসার প্রিয় তমা বউ।এমন বউ আর গ্রামের মধ্যে কারো দেখেন না-ই।এমন ভালো বউটি চলে গেলো তাদের সবাইকে রেখে শুধু একা একা চলে গেলো।সব কাঁদা কাটি বন্ধ।এখন লাশ দাফন করতে হবে।তা না হলে, আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর কেবল বেজার হবেন।মৃত্যু ব্যক্তিটির শাস্তি বাড়তে থাকবে।তার আর দেরি করা মোটেই ঠিক হবে না।তাই দাফন সম্পন্ন করা হলো তারাতারি।যে যার যার ঘরে চলে গেলো।

এবার মুশকিল বিষয় টা হলো, রিফাত হাসান চাকুরির তাগিদে ঢাকায় থাকতে হবে।মা অসুস্থ।সায়মার বিয়ের বয়স হয়েছে, ওকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে।সায়মাকে আর ঘরে রাখা যায় না বেশি দিন।বাবা সংসার দেখাশুনা করবে না কি এদিকে সামলাবে।

সবাই আনা গোনা করতে লাগলো যে, রিফাত কে আবার বিয়ে করতে হবে।বাবা-মা বৃদ্ধ, সায়মা আছে বাড়িতে।একমাত্র আদরের শিশুটিক দেখাশুনা করার মতো ভালো মনের বিশ্বাসী লোকে বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়লো।নইলে স্বাদের অযত্ন হবে।

স্বাদের দেখাশুনা করা, মা বাবাকে সেবাযত্ন এবং সায়েমা আগলে রাখার জন্য রিফাত হাসানের বিয়ে করার অনিবার্য হয়ে পড়ে।কিন্তু এখন কথা হলো যে, ভালো মেয়ে পাবো কোথায়? বর্তমান সমাজে ভালো মেয়ে পাবো কোথায়? সব মেয়ে এখন শুধু ফকোটিয়া।

রিফাত একজন ভালো মনের মেয়ে কল্পনা করছে।যেমনটি আগে ছিলো।হোক না সে অসুন্দর, হোক না সে কালো ও কুতসিত, মন টা যেন তার ভালো হয়।মা বাবা ও বোন সায়মাকে যেন আদর ও সেবা যত্ন করে।আর বাড়ির কাজ গুলো নিজের মতো করে এবং সুন্দর সুন্দর মজাদার খাবার তৈরি করে ব্যাস এর চেয়ে বেশি কিছু না।

রিফাত হাসান মনে মনে কষ্ট পেতে লাগলো।এতো সুন্দর মনের মতো বউটা, আমার এতো তারাতারি আল্লাহ তাআলার নিয়ে যাবে, কল্পনায় আসতেছে না।ভাবতে ভাবতে এক সময় সে অঝোরে কাঁদতে লাগলো।তাঁর চোখে পানি আর ধরে না।

রিফাতের এক কাছের বন্ধু নান্নু ঢাকা থেকে এইমাত্র বাড়ির পাশে একটা ছোট্ট বাজার আছে।সেখানে নামলো।রিফাত হাসান বাজার করতে গিয়ে নান্নুর সঙ্গে দেখা হ’য়ে গেলো।দুই বন্ধু অনেক দিন পরে দেখা হলো।খুব ভালো বন্ধু তাঁরা দুই জন।অনেক সুখ দুঃখ ভাগাভাগি হলো তাদের দুই জনের মধ্যে।মনের ভালোবাসার সুন্দর মনের মতো বউটা তার কাছ থেকে অনেক দুরে চলে গেলো, আর ফিরবে না কোনো দিন।একমাত্র আদরের শিশুটিক দেখার মতো কোনো লোক না-ই।খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে তার. আর তো ও রকম ভালো মেয়ে পাওয়া যাবে না।

নান্নু বল্লো।মেয়ে যদি অসুন্দর হয় তাহলে চলবে? হ্যা চলবে।কালো কুতসিত চেহারা দেখলে ঘৃণা হবে তোর।তবুও চলবে।শুধু মনটার তাঁর ভালো হতে হবে।একটা আবেগী মন চাই তাঁর।

এবার নান্নু বল্লো, আমি এখন বাড়িতে যাই।বাবা-মা ও বউয়ের সঙ্গে দেখা করে হয়ে আসতেছি।দুপুরে তোমারদের বাড়িতে লান্চ করবো।নান্নু ওর নিজের বাড়িতে চলে গেলো।ঘন্টা দুয়েক পরে আবার নান্নু রিফাত হাসানের বাড়িতে আসলো।রিফাতের মা ও বোন সায়মার সাথে নান্নুর অনেক কথা হলো।

এরেই মধ্যে লাঞ্চের টাইম হলো।বুয়া খুব সুন্দর রান্না করতে পারে।অনেক মজাদার খাবার বুয়া তৈরি করেছে।বুয়া হলেও বেশ ভদ্র প্রকৃতির এবং সুশিক্ষিত।কথার রসিকতাও জানে।বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে।সবাই মিলে তৃপ্তি সহকারে তার দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ফেলে।

বিকাল হওয়ার আগে তারা দু’জন রওনা হলো মেয়ে দেখার উদ্দেশ্য।বাড়ির বাহির হয়ে কিছু দুর যাওয়ার পথে নান্নুর এক দুর সম্পর্কের চাচার সাথে দেখা হয়।নান্নুর মনের মধ্যে একটা কথা মনে পড়ে গেল।চাচা প্রাইমারি স্কুলের সরকারি প্রধান শিক্ষক।অবসরে আছেন গত বছর হবে।চাচার একটা মেয়ে আছে।জন্মের কালো।মুখের গঠন আবার অপূর্ব সুন্দর।চাচার কিছু জায়গা জমি, বিশাল পুকুর একটা, আম, কাঁঠালের ও লিচুর বাগান আছে।আর ওনার মেয়ের গায়ের রং কালো বলে কেউ বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় না।আর কারণ চাচার একটা মাত্রই মেয়ে।বিয়ে করলে বাবা একা হয়ে যাবে।তাকে দেখাশোনা করার কেউ থাকবে না।বাবার কথা চিন্তা করে মেয়েটি নিজেও কোনো দিন বিয়ের কথা ভাবে না-ই।না্ন্নু তবুও আশা ছাড়লো না।

নান্নু মুরুব্বি চাচাকে ডেকে ছালাম বিনিময় করলো, কেমন আছেন আপনি? ভালো আছি বাবা।তোমরা কেমন আছো বাবা? হ্যাঁ চাচা আমরাও আপনার দোয়ায় ভালো আছি।

চাচা আমি নান্নু।আমাকে চিন্তে পারেন নাই? চাচা নান্নুর কথা শুনতে চিনে ফেলেছে।ও! তুমি নান্নু? এবার চিনছি বাবা।আসলে অনেক দিন পরে দেখা হলো, তার জন্য আচমকা খাই বাবা।তুমি কিছু মনে করো না বাবা।

এবার রিফাতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে আর ও কে? নান্নু ব’লে উঠলো, চাচা ওর নাম রিফাত হাসান, আমার খুব কাছের বন্ধু।খুব ভালো ছেলে।রিফাত এবার চাচাকে খুব ভদ্রতার সহিত নম্র ভাবে ছালাম দিলো।তা বাবা কোথায় যাচ্ছো তোমরা? চাচা আমরা আপনার বাড়িতে আমরা যাবো।কেন বাবা?

যাবো চাচা। পারুল কেমন আছে চাচা? ও! পারুল ও পাগলি মা’ র কথা বাদ দাও।ও ভালো আছে।মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটা হাইস্কুলে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষকতা করছে।কতো বার বলছি যে, একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে সংসার জীবনে নিজেকে মনোনিবেশ করে নে।আমার পাগলি বলে, আমি পরের সংসারে যাবো না বাবা।আমি যদি পরের সংসারে যাই, তাহলে তোমাকে দেখবে কে? বলোত দেখি বাবা।এই ধরো সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, আবার রাতের বেলা ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিছানা করে দেয়া ইত্যাদি।আমি বলি, ও সব আমি একা বেশ করত পারবো।

তা বাবা আমার বাড়িতে সত্যিই তোমরা যাবে।হ্যাঁ চাচা সত্যি আমরা আপনার বাড়িতে যাবো।তিনজনে হেটে চলছে।কিছু দুর যাওয়ার পর একটা ভালো ফাস্টফুডের দোকান।ওখানে দাঁড়িয়ে তারা চা কফি খেলো।

এরই ফাঁকে রিফাত মজাদার খাবার কিছু কিনে নিলো, আবার কিছু ফল মিষ্টি এবং কিছু চকলেট কিনে নিলো।তারা চা নাস্তা খেয়ে আনার হাটা শুরু করে দেন।এক পর্যায়ে নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়ে।

বাবা ডাকছে পারুল কোথায় তুই? মেহমান এসেছে।জলদি আয়।পারুল রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসলো বাবার মুখের দিকে তাকালো।হাঁ করে দেখছিস কি? এই দেখেছিস না কে এসেছে? পারুল এবার নান্নু র দিকে তাকালো।খুশিতে আটখানা হ’য়ে গেলো।

পারুল বললো, আরে নান্নু ভাই! তুমি হঠাৎ করে আমাদের বাড়িতে? আর উনি বোধ হয় তোমার বন্ধু না? হ্যাঁ ঠিক বলেছো ও আমার একমাত্র বন্ধু, ওর নাম, রিফাত হাসান।ঢাকায় একটা গভর্মেন্ট অফিসে অফিসার পদে চাকুরী করেন।আমরা দুইজনেই ঢাকায় থাকি।কিন্তু সময়ের অভাবে কেউ কারোর সঙ্গে দেখা করতে পারি না বা যোগাযোগ করতে পারি না।আজ সকাল বেলায় দুই বন্ধুর হঠাৎ দেখা হয়ে গেল।ভাবলাম বন্ধু রিফাত কে সাথে নিয়ে তোমার বাড়িতে এসে তোমার আর চাচার সাথে দেখা করতে আসবো।আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানী পথে চাচার সাথে দেখা হয়।

তিন জনে গল্প করতে করতে একেবারে সোজা তোমার বাড়ি চলে আসলাম।পারুলের হাত বাড়িয়ে রিফাত তার হাতে নিয়ে আসা মিষ্টি ও ফলমূলের ব্যাগগুলো তুলে দিতে গেলো।এক সাথে চার পাঁচটা ব্যাগ।হাতে তুলে দিতেই পারুলের হাত আর রিফাতের হাতে হাত ঘষা লাগলো।দুইজনের গায়ে সংস্পর্শের শিহরণ জাগলো।দুই জনে একে অপরের চোখের দিকে তাকালো।

পারুলের এ প্রথম কোনো পুরুষ মানুষের শরীর স্পর্শ করলো।তারপর পারুল লজ্জাবোধ না করে ব্যাগগুলো হাতে নিয়ে ঘরে চলে গেলো।বাবাকে বললো, বাবা তুমি নান্ন ভাই আর রিফাত ভাই কে ঘরে নিয়ে যাও, বসতে দাও।পারুল রান্নাঘরে ঝটপট নাস্তা রেডি করে মাঝে মধ্যে নান্নু এবং রিফাতের সাথে এসে কথা বলে আবার রান্নাঘরে চলে যায়।

রিফাত হাসানের সাথে পারুল একেবারে নেহাৎ পরিচিতর মতো কথা বলতে লাগলো।মনে হয় যেন কতো বছর ধরে তাদের দুইজনের মধ্যে পরিচয় আছে।খুব ফ্রী ভাবে কথা বলা শুরু করে দিলো।

রান্নাঘর ঘর হতে কে যেন পারুল কে ডাকলো।পারুল আপা জলদি এসো, নাস্তা রেডি হয়েছে।তুমি এসে নিয়ে যাও।পারুল ঝটপট রান্নাঘরের দিকে দৌড়ে গেলো।পারুল গিয়ে দেখে খুব দারুণ ভাবে নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে মেয়ে টি।হরেক রকমের আইটেম করে নাস্তা রেডি করা হয়েছে।।

রিফাত হাসান আর নান্নু একেবারে অবাক।এতো অল্প সময়ে এতো ভিআইপি আইটেম তৈরি করা কি ভাবে সম্ভব হলো।যাই হোক হাসি গল্পের মধ্যে নাস্তার পর্ব শেষ হলো।

নাস্তা শেষ হতেই চায়ের ট্রে এসে হাজির।চা পর্ব শেষ।এখন নান্নু চালাকি করে পারুলের আব্বাকে কি যেন বলার জন্য বাগান বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেলো।নান্নুর উদ্দেশ্য হলো, পারুল আর রিফাত তাদের দুইজনের মনের আবেগ প্রকাশ করুক।পারুল রান্নাঘরের মেয়েটিকে খাবার আয়োজন করার জন্য বল্লো।মেয়ে টিও দারুণ চালাক।বলতে বলতেই সে কাজে লেগে গেলো।রিফাত হাসান আর পারুল দুইজন দু’জনের মনের আবেগ প্রকাশ করলো।

রিফাত হাসান বল্লো, জানো পারুল আমি বর্তমানে খুবই সমস্যার মধ্যে আছি।একদিকে নিজের চাকুরী, অন্য দিকে আমার একমাত্র সন্তান স্বাদ, আর অসুস্থ বাবা মা।মা বাবা ‘কে দেখাশুনা ও তাদের সেবা যত্ন করার জন্য একটা ভালো মনের মেয়ে আমার বিশেষ প্রয়োজন।কিন্তু আমার ভালো মনের মেয়ে তো আর সহজ ব্যাপার নয়।মেয়ে আছে আরো অসংখ্য, সংসারি মেয়ে পাওয়া কঠিন….

আচমকা খেয়ে শেষে রিফাত হাসান পারুল কে বল্লো, চাচা আর নান্নুসহ কোথায় গেলো, এখনো আসছে না কেন?এবার পারুল বল্লো কেন? আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না? ভালো তো লাগছে।তাহলে? না মানে, তুমি যদি আমার সাথে কথা বলতে বিরক্ত হও, সে জন্যেই।পারুল না, ভাই আমার মোটেই বিরক্ত লাগছে না।

কাজের বুয়ার নাম ফুলকি।কাজের বুয়াও নয় সে।ফুলকির বাড়ি পারুলদের বাড়ির পাশে।ওর বাবা নাই।ফুলকির বয়স যখন ৩ বছর।তখন ওর বাবা অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

ফুলকির বাবা যখন মারা যায়।তার ৫/৬ বছর পরে পারুলের মা মারা যায়।পারুল তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী।সেই থেকে ফুলকি সবসময় পারুল কে যে কোন কাজে হেল্প করে।খুব ভালো ও বুদ্ধিমতি মেয়ে ফুলকি।

পারুল ফুলকি কে ডেকে বললো দুই কাপ চা পাঠিয়ে দিতে।চা চুলার আগুনে বসানোই ছিলো।বলা মাত্রই সুন্দর পরিপাটি ভাবে দুই কাপ চা নিয়ে ফুলকি হাজির।এক কাপ রিফাত ভাই কে দে, এক কাপ আমাকে দে।আর তোর কি খবর? রান্না বান্না কতোদুর হলো।ফুলকি বললো।সব রান্না শেষ আপু।নান্নু ভাই আর চাচা মিয়া আসলে আমি খাবার রেডি করি। আপু আমি রান্না ঘরে গেলাম।আচ্ছা যা।

পারুল উচ্চ শিক্ষিত।ভাবটা আলাদা।রিফাত কে ইশারা করে বললো, আ’ রে ভাই চা খান।চায়ের চুমুকের সাথে সাথে তারা অনেক কথা ব’লে ফেলল্লো।দুই জন দুইজনকে পছন্দ করার মতো ভালো লাগবার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেল।

ও দিকে নান্নু আর পারুলের আব্বা বাগান বাড়ি দেখতে নিয়ে গেলো।ওদের কথা একটু বলি।বাগান দেখতে দেখতে নান্নু এবার ব’লে ফেললো, যে চাচা আমি একটা কথা বলি, রাগ করবেন না তো চাচা? চাচা, না বাবা, তুমি কি যে বলো বাবা।রাগ করবো কেন? কোন দিন কি কোন কথায় রাগ করেছি নাকি? তুমি আমার ছেলের মতো।তা চাচা পারুলের বয়স হয়েছে ও কে বিয়ে দেয়া আপনার ফরজ হ’য়ে পড়েছে।চাচা আর কি বলি বাবা? কে শুনে কার কথা? কতো বার বলেছি বিয়ের কথা।ও কিছুতেই রাজি হয় না।বলে যে আমি যদি পরের সংসারে যাই তাহলে তোমাকে দেখবে কে? এ বাড়ি জমি জমা, বাগান বাড়ি।এবার নান্নু বিষয় টা গুরুত্ব সহকারে ভাবছে।

নান্নু বিষয় টা চিন্তা করতে লাগলো।উপায়ও বের করে ফেলে।চাচাকে গুরুত্ব সহকারে বুঝাতে লাগলো।দেখুন চাচা ফুলকি আপনার প্রতিবেশীর মেয়ে।সেই ছোট্ট বেলা থেকে আপনি তাঁকে চেনেন।ফুলকি এখন পরিপূর্ণ একটা সাবালিকা মেয়ে হয়েছে।প্রতিবেশী হিসেবে আপনার দায়িত্ব অনেক।আমি বলি কি, ফুলকিকে একটা গরীব ঘরের ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে আপনার বাড়িতে রাখুন।আপনার জায়গা জমি ওরা দেখাশুনা করবে।জমি গুলো ফসল ফলাবে।আপনার যেটা প্রয়োজন হয়, সেটা না হয় ফুলকি দিয়ে দেবে।আর আমি একটা ছেলে পারুলের জন্য পছন্দ করেছি।ছেলেটা পারুলের সাথে মানাবে দারুণ।চাকুরীজীবী ছেলে।ঢাকায় থাকে।আগে একটা বিয়ে করেছিলো, বউ হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গিয়েছে।একটা ছোট্ট ছেলে আছে।ছেলের এখন বয়স ছয় বছর হবে।ছেলেটা বিয়ে করতে চায় না।কিন্তু চাকুরির জন্য তাঁকে ঢাকায় থাকতে হয়।বাড়িতে তার বাবা-মা অসুস্থ।বোন সায়মা, আর একমাত্র আদরের সন্তান স্বাদ কে দেখাশুনা করার গরজে তাঁকে বিয়ে করতে হবে।

আপনার বাড়িতে ফুলকি থাকবে।ফুলকি একটা ছেলেকে পছন্দ করে।সেটা কেউ জানে না।সেটা একমাত্র আমি তা বুঝতে পাই।ওই ছেলের সংগে ফুলকির বিয়ে হলে সত্যিই ফুলকি খুব ভাগ্যবতী হবে।আপনারও কাজে লাগবে।

ফুলকি স্বজলকে পছন্দ করে।স্বজলের বাড়িও একই গ্রামে।আপনি বেঁচে থাকতে ওর একটা ব্যবস্থা করে যান।নইলে আর পারুল সংসারের দিকে মনোনিবেশ করবে না।আমি ত চাই, বাবা।কিন্তু ওই পাগলি মেয়ে টাকে তো আর বোঝাতে পারি না।

দেখ না বাবা তুমি একটু পারুলের সাথে কথা ব’লে।রাজি করাতে পার না কি? আচ্ছা বাবা আমি একবার চেষ্টা করি না কেন? এবার চলো বাড়ির দিকে যাই।ওরা বাগান বাড়ি থেকে ফিরে এসে হাত মুখ ধুয়ে একেবারে খাবার টেবিলের দিকে দিকে গিয়ে বসে পড়লো।

ফুলকি ও পারুল দুইজনে মিলে খাবার পরিবেশন করে খাওয়ালো।খাওয়া দাওয়া শেষ।এবার পারুল আর ফুলকি খেয়ে নিলো।এবার নান্নু আর পারুল ঘরের পরামর্শ করছে।নান্নু রিফাত হাসান পারুল কে বিয়ে করতে চায়।এতে পারুল রাজি আছে নাকি? পারুল এক বাক্যে না কথা বলে দিল।বললো যে, নান্নু ভাই তুমি তো সবে জানো।আমি ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছি।আমার অবহেলা আর অযত্ন হবে ব’লে, বাবা আর বিয়ে করেন নাই।

নান্নু হাল ছাড়ার নয়।সে পিড়া পীড়ি করতে লাগলো।এক সময় ফুলকির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বললো যে, ফুলকি ও স্বজলের বিয়ে দিয়ে তোমাদের জায়গা জমি ওরা দেখাশুনা করবে, আমার মনে হয় ওরা তোমাদের কখনো ঠকাবে না। তোমাদের যেটা প্রাপ্য সেটা তোমরা পেয়ে যাবা।চাচাকে তোমাদের সাথে নিয়ে রাখবা।চাচা যদি তোমার সাথে থাকে, তাহলে বেশ ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

তোমাকে হাত জোর করে বলছি পারুল।পারুল এবার কিছু একটা নম্রতা সহকারে বললো, পিচ্ছিটাকে একবার নিয়ে এসোত আমি দেখবো।

পারুলের মনে ভয় যে, ওই বাড়িতে বউ হ’য়ে যাওয়ার পরে পিচ্ছি স্বাদ যদি আমাকে মা হিসেবে মেনে নিতে না পারে।সে জন্যেই ভয়।নান্নু বুঝতে দেড়ি হলো না আর।সে বুঝে ফেললো, নান্নু পারুলের।মতামত আছে।

নান্নু এবার বললো।ফুলকি আার স্বজলের বিয়ে আগে হবে।তাদেরকে এ বাড়িতে রেখে তারপরে তোমাদের বিয়ে হবে।নান্নু ভাই বাবার কি হবে? আরে বাবারো ব্যবস্থা হবে।

এবার নান্নু আর রিফাত যার যার বাড়ি, তার তার বাড়িতে চলে গেলো।পরের দিন নান্নু রিফাতের বাড়িতে আসলো।পারুল সম্পর্কে মোটামুটি পজেটিব ধারণা দিয়ে দিলো, মেয়ে ১০০% খাঁটি তোমাদের সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে চলতে পারবে।সায়েমাকে বললো স্বাদকে নিয়ে চলো।দেখে আসি।আমি যাবো? না ভাইয়ো রাগ করবে।রিফাত হাসান এবার পাকাপোক্তভাবে অনুমতি দিয়ে দিলো।

স্বাদ আর সায়েমা খুব সুন্দর ভাবে সেজেগুজে তৈরি হয়ে গেল।রিফাত হাসান নান্নুর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেন, বললেন পারুলের বাড়িতে যেন খালি হাতে না যায়।কিছু কিছু ফলমূল আর কিছু মিষ্টি আর চকলেট নিয়ে যায়।নান্নু টাকা নিতে চাইলো না।ওসব আমি কিনে নিবো।কিন্তু রিফাতের পিড়াপীড়িতে নিতে বাধ্য হলো।

তারা তিনজনে পারুল, স্বাদ, আর নান্নু মিলে রওনা হ’য়ে গেলো।অটো বাইক রিজার্ভ করে নিয়ে চলে গেলো।পথের মধ্যে তারা অটো বাইক থামিয়ে নান্নু আর সায়েমা ফাস্টফুড খেলো।স্বাদ কে চিপস আর বিস্কুট খেলো।তারপর ফলমূল কেনা কাটা করে তারা পারুলের বাড়ির দিকে রওনা হ’য়ে গেলো।এক সময় তারা পৌঁছে গেলো।

পারুল কে দেখে স্বাদ দৌড়ে পারুলের কোলে উঠে গেলো এবং কানের কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলছে, তুমি আমার ভালো মা হবে? মাত্র ৪ বছর বয়স কি ভাবে বুঝলো, সে তার ভালো মা হবে? ছোট ছেলে স্বাদ সায়েমা পারুল নান্নু ভাই সহ অনেক কথা হলো তাদের মধ্যে।

স্বাদ কে পারুল মায়ার জালে আবদ্ধ করে ফেলেছে।পারুল ফুলকিকে কাজে লাগিয়ে দিয়ে কিছু ক্ষনের জন্য বাহিরে একটা নিকটতম শহরে গেলো।সে রিফাতের জন্য একটা নামি দামী শার্ট প্যান্ট নান্নু ভাইয়ের জন্য সুন্দর প্যান্ট শার্ট, সায়েমার জন্য জামা স্বাদের জন্য সুন্দর প্যান্ট শার্ট চশমা কিনে সোজা বাড়িতে আসলো।

পারুল এমনভাবে কাপড় কিনেছে, কারো অপছন্দ করবার মতো নয়।ফুলকির জন্য একটা ভালো জামা নিলো পারুল।ফুলকির প্রতি অগাধ ভালোবাসা আছে তার।ফুলকির বিপদে আপদে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে দেখলেই পারুল তাৎক্ষনিক সমাধান করে ফেলে।ফুলকিকে পারুল অত্যান্ত ভালোবাসে।

বাড়িতে ফিরে পারুল দেখে সব রাঁধাবাড়া শেষ।সায়েমা আর নান্নু বসে গল্প করছে তাঁরা।স্বাদ তাদের আঙিনায় প্রতিবেশির কয়কজন স্বাদের সমবয়সী খেলার সাথি পেয়ে খেলায় একেবারে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে।সারা গায়ে কাঁদা ধুলো বালি মেখে একেবারে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে।

পারুল বাড়িতে এসে দেখে যে, স্বাদের এ অবস্থা।তারাতারি করে স্বাদের গা পা ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করে দিয়ে পারুল যে, নতুন জামা নিয়ে আসলো পড়িয়ে দিলো।অপূর্ব সুন্দর মানিয়েছে।এবার পারুলের আনা গিফট গুলো সবাই কে দিয়ে দিলো।

এবারে খাওয়া দাওয়া করবে।সবাই বসে পড়লো।পারুল ও ফুলকি খাবার পরিবেশন করছেন।স্বাদের তুমি আমার ভালো মা হবে? এই কথাটা বার বার পারুলের মনে দোলা দিতে লাগলো।

এতোটুকু বয়সের ছেলে কি ভাবে বুঝলো যে, আমি তার মা হবো।এবার নান্নু কে ডেকে পারুল বললো যে, তারাতারি ফুলকি আর স্বজলের বিয়ের আয়োজন করে ফেলো।ফুলকিকে আমাদের বাড়িতে রেখে আমাদের বিয়ের আয়োজন করে ফেলবে।মহা ধুমধামে বিয়ে হ্য়ে গেলো।

রিফাত হাসানের বাড়ির লোকজন আসলো, ফুলকির বিয়েতে।রিফাত হাসানের মা বাবা ফুলকির জন্য গিফট এনেছে।সেগুলো ফুলকিকে পড়িয়ে দিলো।আরো কতো কিছু দিলো।অন্যান্য মেহমানরাও ফুলকির জন্য হরেক রকমের উপহার আনলো।

বিয়ের কাজ সুসম্পন্ন করা হলো। রিফাত হাসান আর পারুল ঘরে বসে কিছু ক্ষণ গল্প করলো।পারলে আগামী সপ্তাহে শুক্রবার বিকেলে আমাদের বিয়ের আয়োজন করে ফেলো।

দেখতে দেখতে আগামী সপ্তাহে শুক্রবার এসে গেলো সবাই প্রস্তুত।নান্নু পারুলের বাড়িতে আছে।স্বজল মানে ফুলকির স্বামী।সে খুব কর্মঠ ও পরিশ্রমী।কোনো কাজই তার কাছে কঠিন নয়।বিয়ে সম্পন্ন হলো।ফুলকির হাতে চাব বুঝে দিয়ে পারুল ও পারুলের বাবাকে সাথে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ি চলে আসলো।শ্বশুর বাড়ির লোকজনুলোও খুব ভালো মনের মানুষ।তারা হাসি মুখে নতুন বউকে ঘরে বরণ করে নিলো।

পারুল রিফাত হাসান কে কানে কানে ফিসফিস করে বললো বাবাকে একটা ভালো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পরিপাটি ুটাচ বার্থ রুম আছে এরকম একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে এসো।আমি এখানে তোমাদের বাড়িতে নতুন।আমি চিনিও না আবার দেখি নাই।কোনটা কার রুম।রিফাত হাসান গায়ে বিয়ের কাপড় বের হতে পারছে না।

রিফাত আবার নান্নুর আবার রিফাতের বাড়ি সম্পর্কে মুখস্ত।নান্নু পারুলের বাবাকে রাতেই থাকার সুবন্দোবস্ত করে দিলো।সবাই যার যার বিছানায় শুয়ে পড়লো, পারুল গভির রাতে রিফাত কে সাথে নিয়ে বাবাকে দেখতে এলো।দেখে বাবা আছে তার সুবিধামতো জায়গায় আছেন।বেশ ভালো বাবা।পরের ফুলকি ও স্বজল অনেক বড়ো বড়ো, সবজি পুকুরের বড়ো মাছ নিয়ে পারুল কে দেখার জন্য।

খুব ভালো আছে রিফাত আর পারুল।সত্যি ওরা দুজন খুব সুখী হবে।পারুলও খুব ভালো মেয়ে।কোন অহংকার নেই।সাধারণ এক মেয়ে।উচ্চ শিক্ষিত আবার সাদাসিধা।সবাইকে আপনজন।যে-ই দেখে সেই আকৃষ্ট হয় পারুলের প্রতি।রিফাত ও খুব খুশি পারুল কে পেয়ে।

পারুল বাবা-মা’ র সেবাযত্ন এবং সায়েমা ও স্বাদের দেখা শুনা রীতিমত করতে লাগলো, বাড়িতে সবাইকে দেখাশুনা করে আবার তার স্কুলের ক্লাস করাতো।

পারুলের মতো অতো ভালো দায়িত্বশীল শিক্ষক নাই।তাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্যারের অনুরোধক্রমে পারুল প্রতি ক্লাসে শুধু ইংরেজি বিষয় ক্লাস করাতো।ইংরেজি বিষয় সবাই ভালো রেজাল্ট করতো।

স্বাদকে পারুল সময় দেয়।স্বাদের কখনো ঘোড়া ঘোড়া খেলে।কখনো কানামাছি ভোঁ ভোঁ, কখনো সাজে ভুত।আবার কখনো ক্রিকেট নিয়ে খেলে।স্বাদ একটু বড়ো হলো পারুলের বিদ্যালয়ের একটা ভালো প্রাইমারি স্কুল আছে সেখানে স্বাদকে ভর্তি করে দেয়া হলো।

এভাবেই স্বাদ ধীরে ধীরে লেখা পড়া শিখিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো।পারুল কে পেয়ে স্বাদ তার মায়ের দু:খ ভুলে গিয়ে এতো সুন্দর জীবন গড়বে এটা কল্পনা করা যায় না।

স্বাদ এখন অনেক বড়ো উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা।এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র পারুলের মতো ভালো মায়ের জন্য।সায়েমারও একটা খুব ভালো ফ্যামিলিতে বিয়ে হয়েছে।রিফাতের বাবা মাও এখন মোটামুটি অনেক সুস্থ।একমাত্র পারুলের তা ৎক্ষনিক সেবাশুশ্রূষার কারণে।পারুল একজন যোগ্যতা সম্পম্ন ভালো মা।

সমাপ্ত


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 6 =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x