শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাতের প্রতিরোধে তালগাছের বিকল্প নেই,৬৪ জেলা বজ্রঝুৃঁকিতে

প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বজ্রপাত এর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।সারাদেশে কোন না কোন স্থানে বজ্রপাতে মানুষ ও গবাদিপশু মারা যাচ্ছে।

এখন বজ্রপাত কোন মৌসুম মানছে না, রৌদ্রউজ্জ্বল বৃষ্টিহীন পরিবেশে বজ্রপাত ঘটছে।তবে বর্ষা মৌসুমে এলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যায়।মেঘলা আকাশ, বিদ্যুৎ এর চমক, গগনভেদি আওয়াজ আর ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত ঘটতে থাকে।

এপ্রিল ও মে এই দুই মাসে বজ্রপাতের সংখ্যা বেশী থাকে।আর এ দূর্যোগ অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে।আগে বছরে বজ্রপাতে দুই চার জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত।আর এখন প্রতিবছর বজ্রপাত মহামারির আকার ধারণ করেছে।

গত কয়েক বছরে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যুর হিসাব রেকর্ড করা হয়েছে।এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।এই দূর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের ভাবনার শেষ নেই।

জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাত বাড়ছে।তাপমাত্রা যত বেশি হবে বজ্রপাত তত বাড়বে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ৪০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে।এক ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে ২০ শতাংশ বজ্রপাত বেড়ে যায়।এ হিসাবে বজ্রপাত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।

২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বজ্রপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে।বর্ষাকাল শুরু থেকে বজ্রপাত বেশি হয়।আর বাংলাদেশে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সাধারণত মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া, গরম বাতাস ও শীতল বাতাস পরস্পরের সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে চার্জযুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ চমকায় এবং কোনো কোনো সময় বজ্রপাত হয়।যা উঁচুস্থানে আছড়ে পড়ে।আর তালগাছ সবচেয়ে উচু হওয়ায় সেখানেই বজ্রপাত হয়।এতে করে মানুষের প্রাণ বেঁচে যায়।

জনমনে প্রচলিত আছে, আগে বজ্রপাত হলে তা তালগাছ বা অন্য কোনও বড় গাছের ওপর পড়তো।বজ্রপাত এক ধরণের বিদ্যুৎ রশ্মি।তাই বজ্রপাতের ওই রশ্মি গাছ হয়ে তা মাটিতে চলে যেত।এতে জনমানুষের তেমন ক্ষতি হতো না।

কিন্তু গ্রামে এখন আর আগের মত তাল গাছ দেখা যায় না।তেমনি বড় আকারের গাছও এখন আর তেমন নেই।দেশের প্রায় সর্বত্রই তালগাছসহ বড় বড় গাছের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে।দেশব্যাপী বনায়ন হলেও তা আকারের দিক থেকে বড় হয়ে ওঠেনি।মূলত এ কারণে বজ্রপাতে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাছাড়া বজ্রপাতের আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না।তাই এ দূর্যোগ থেকে সাধারণ মানুষ যেন রেহাই পায় সেজন্য দেশব্যাপী তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রকৃতিক বিরূপ প্রভাবে বজ্রপাত হচ্ছে, তারপরও মানুষ থেমে নেই।কিভাবে আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।স্থানীয় জ্ঞান থেকে বের হয়ে এসেছে এমন এক অভিমত।আর তা হলো তালগাছ লাগানো।বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ অনেকটাই কার্যকর।

বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে।কারণ, তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে।তালগাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক।তালগাছের পাশাপাশি নারকেল গাছ, সুপারিগাছের মতো উচ্চতা সম্পন্ন গাছ বজ্রপাত নিরোধে বেশ কার্যকরী।

বর্ষ মৌসুমে বজ্রপাত বাড়ছে।মার্চ ও এপ্রিল মাসে বজ্রপাতে বেশী লোক মারা যায়।উপকূলীয় এলাকায় এর মাত্রা কয়েক গুণ বেশি।বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে।সারা পৃথিবীতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশ মারা যায় এ দেশে।

বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাড়িয়েছে।এর সেই সাথে গবাদিপশুও মারা যাচ্ছে ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অসংখ্য গাছপালা।

আবহাওয়াবিদরা বলেছেন, বজ্রপাত কখন কোথায় পড়বে এর কোন নিশ্চয়তা নেই।দূর্যোগ প্রবণ বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতেই বজ্রঝুকিতে রয়েছে।

বজ্রপাত আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ।এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও অভিমত হলো, খোলামাঠ, রাস্তার পাশে এমনকি বিল, হাওড়-বাওড় ও বিস্তির্ণ ফসলের মাঠে উঁচু তালগাছ লাগাতে হবে।তাল, নারকেল, সুপারি প্রভৃতি উঁচু গাছ লাগানো যেতে পারে।এর মধ্যে বজ্রপাত নিরোধ হিসাবে তালগাছ উল্লেখযোগ্য।এ গাছই বজ্রপাত শোষক হিসাবে কাজ করবে।গ্রাম অঞ্চলে মাঠে কৃষক ও খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ আকস্মিক দূর্যোগ বজ্রপাত থেকে রেহায় পাবে।

আগে উঁচু বিল্ডিং গুলোতে বজ্রপাত শোষক ‘থান্ডার এরেস্টার’ লাগানো হতো।এখন শহর ও গ্রাম অঞ্চলের উঁচু বিল্ডিং বানানোর সময় আগেই থান্ডার এরেস্টার লাগানোর পরিকল্পনা রাখতে হবে।তবে বজ্রপাত থেকে কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকবে।

কালবৈশাখী মৌসুমে ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা স্বাভাবিক।ঘনকাল মেঘের চারিপাশ ধারায় নামা বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত জনমনে উদ্বেকও তৈরি করে।বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধির কারণে বজ্রপাত বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেঘলা আকাশ আর বিদ্যুৎ চমকানো থেকে বজ্রপাত ঘটতে থাকে।সব বজ্রপাত প্রকৃতির বুকে আঘাত হানে না।অধিকাংশ মহাকাশে বিলিন হয়ে যায়।আর কিছু কিছু বজ্রপাত প্রকৃতির বুকে আঘাত হানে।বজ্রপাত যেহেতু উঁচু জায়গা আঘাত হানে, সেজন্য খোলামাঠ বা বসতবাড়ীর পাশে উঁচু গাছ হিসাবে তালগাছ বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে সবথেকে কার্যকর।যেহেতু উঁচু স্থানে বজ্রপাত হয় সে কারণে তালগাছ কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।এ গাছ দীর্ঘজীবী।প্রায় এক শত বছর বাঁচে।এটা শুধু বজ্রপাত প্রতিহত নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তালগাছের প্রয়োজন রয়েছে।

কালবৈশাখী-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা-জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প-অগ্নিকান্ডের সঙ্গে নতুন দুর্যোগ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত।বিষয়টি সরকারকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে দূর্যোগ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যাপক আলোচনা ও পর্যালোচনা করেছে।

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে দেশব্যাপী তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।মোবাইল টাওয়ার গুলোতে আর্থিং এর ব্যবস্থা সংযুক্ত করে বজ্র নিরোধক হিসাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বজ্রপাত মোকাবেলায় দালান কোঠায় বজ্র নিরোধক দন্ড লাগানো বাধ্যতামূলক করতে গণপূর্ত মন্ত্রাণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।ইতিমধ্যে দেশের ১৫টি দূর্যোগ প্রবণ এলাকায় বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে বজ্রপাত নিরোধক দন্ড স্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম বলেন, প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।এ প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে বাঁচার উপায় প্রকৃতি।তাই প্রকৃতির সহায়তা নিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।সরকারের এতো সব উদ্যোগের পাশাপাশি এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে তালবীজ রোপনের পাশাপাশি জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।তা হলে আকস্মিক প্রাকৃতিক দূর্যোগ বজ্রপাত থেকে মৃত্যু হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে এবং মানুষ ও গবাদিপশু সুরক্ষায় থাকবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − ten =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x