বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
নোটিশ :
দেশের জনপ্রিয় সর্বাধুনিক নিয়ম-নীতি অনুসরণকৃত রাজশাহী কর্তৃক প্রকাশিত নতুনধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘যমুনা প্রতিদিন ডট কম’

সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুকি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের আঘাত নিয়মিত ঘটনা।অন্যদিকে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত ও লবণাক্ত পানি বৃদ্ধি চলতেই থাকে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পরে ওই অঞ্চলের কৃষি,জীবন জীবীকার উপর।জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে যে উষ্ণায়ন, পরিবেশের বিপন্নতা তার প্রভাব প্রথম এসে পড়ে নারীর ওপর। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা না করে কলসি নিয়ে পানির খোঁজে দীর্ঘপথ হাঁটতে থাকে এসব গর্ভবতী নারী।এছাড়াও জ্বালানির জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে গর্ভবতী নারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনের ভেতরে যেতে হয়।

সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। কোনো একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘটলে সবাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে,কিন্তু কেউ পরিবার পরিকল্পনা, জন্মনিরোধক নেয় না,এবং গর্ভবস্থার সুযোগ সুবিধা গুলো গ্রহণ করে না।যেকোনো জরুরি অবস্থায় জন্মনিরোধক গ্রহণ করা উচিত।আর এই জন্য নারীদের এই দুর্যোগকালীন সময়েও অনেক ধকল সহ্য করতে হয়,আক্রান্ত হয় না রোগে।শুধু পানি সংগ্রহের জন্য পরিশ্রমের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নারীদের মৃত শিশু জন্মদানের হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া পানি সংগ্রহের জন্য চিংড়িঘেরে যা লবণাক্ততা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ কিংবা বেড়িবাঁধের ওপর দীর্ঘ নির্জন পথ পাড়ি দেওয়ার সময় গর্ভবতী নারীরা দূর্ঘটনার শিকার হয়।

দুর্যোগের হার ও ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায়ও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে পায়খানা ও টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় গর্ভবতী নারীরা চরম সংকটে পড়েন। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের অনিরাপদ পরিবেশ ও সীমিত জরুরি সেবার কারণে গর্ভবতী নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে পড়ে।

শুধু তাই নয় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (WHO)পরামর্শ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির দৈনিক পাঁচ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু উপকূলীয় এলাকায় জনগোষ্ঠীকে দৈনিক ১৬ গ্রামের অধিক লবণ খেতে হচ্ছে, যা দেশের অন্য এলাকার জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক গুণ বেশি।

খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিশেষ করে আশাশুনি,শ্যামনগর, গর্ভবতী নারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা অনুযায়ী, অতিরিক্তি লবণাক্ত পানি গ্রহণের ফলে নারীদের জরায়ু রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশু জন্ম দেয়ার হার বেড়েছে। এছাড়া নারীরা দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ, গোসল, কৃষি কাজ, গবাদিপশু পালন, চিংড়ির পোনা ধরাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নারীরা লিউকোরিয়াসহ সাধারণ পানিবাহিত রোগ এবং চর্মরোগের সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হয়।

উপকূলীয় অঞ্চলে নারী ও কিশোরীরা মাসিকের সময় ব্যবহৃত কাপড় ধুয়ে আবারো সেটি ব্যবহার করে এবং লবণাক্ত পানিতে গোসলসহ দৈনন্দিন কাজের কারণে অন্তঃসত্ত্বা মা ও কিশোরীদের মধ্যে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়। চারদিকে পানি থাকার কারণে তাঁদের ব্যবহার করা কাপড়টি অনেক সময় ঠিকমতো ধোয়া ও শুকানোর ব্যবস্থা থাকে না। ফলে এই কাপড় ব্যবহারের কারণে তাঁদের জীবনের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়।

তাছাড়াও লবণাক্ত পানির কারণে নারীরা এখন জরায়ু ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে ভুগছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতিবছর যে কয়েক লাখ নারী জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ উপকূলীয় অঞ্চলের নারী। নারীদের জরায়ুসংক্রান্ত অসুখের তীব্রতা লবণাক্ততাপ্রবণ গ্রামগুলোতে বেশি। সে জন্য অল্প বয়সেই এ এলাকার নারীরা জরায়ু কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে।

তাই দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি কেবল উপকূলের নারীদের স্বাস্থ্যহানি ঘটাবে না, বরং জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কারণ এই নারীরাই উপকূলের কৃষি ও মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

উপকূলীয় এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা ও জেলা হাসপাতালকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার উপকরণ, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিতে হবে।

জাতিসংঘের ১৫ বছর মেয়াদি এসডিজি পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণের জন্য দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং লিঙ্গবৈষম্য প্রতিরোধ করা অন্যতম।

এসব পরিবারের শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে।তাই গর্ভবতী নারী সদস্যদের জলবায়ু সহিষ্ণু জীবিকার সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও বিপণনব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে অভিযোজন সক্ষমতা গড়ে তোলা ও লবণাক্ততামুক্ত, দুর্যোগ সহনশীল পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার জনগোষ্ঠীর খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবন-জীবিকার মানোন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি মোকাবিলায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ এবং মানুষ, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজন, প্রশমন, প্রযুক্তি উন্নয়ন ও হস্তান্তর, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে।

যেকোনো কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং তাদের সচেতনতার ওপর। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবং তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা রাখতে হবে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী,ইতিহাস বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − one =


অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ

x