শিশুদের কোমল দেহে ক্ষতিকারক সিসার উপস্থিতি দিন দিন বেড়েই চলছে।স্নায়বিক বিষাক্ততা শিশুদের বাড়ন্ত দেহ ও মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। সিসার বিষক্রিয়ায় শিশুরা প্রতিবন্ধীতার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (who)তথা বিশ্ব স্থাস্থ্য সংস্থ্যা এর তথ্যানুযায়ী, মানবদেহে সীসার বিষক্রিয়ার দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশের নাম।
"লেড পয়জনিং ইন বাংলাদেশ রিসার্চ এভিডেন্স ফর আর্জেন্ট একশন " এর গবেষণায় দেখা গিয়েছে সম্প্রতি দেশের সাড়ে তিন কোটি শিশু তাদের দেহে ক্ষতিকর সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা "সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন" (সিডিসি) নির্ধারিত ৩.৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি কারো শরীরে সীসার উপস্থিতি দেখা গেলে তাকে ক্ষতিকর বলা হয়েছে সেখানে দেশের প্রায় এক কোটি শিশুর রক্তে রয়েছে ১০ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটারের বেশি সিসা।
সিসা দূষণ বর্তমান সময়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করছে। প্রতিবছর সিসা দূষণের ফলে দেশে ৩১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে যা দেশের মোট মৃত্যুর ৩.৬ শতাংশ।
জাতীয় শিশু বিষয়ক সংস্থা "ইউনিসেফের" উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) এর গবেষণা অনুযায়ী সম্প্রতি, রাজধানীতে ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষায় সকলের শরীরে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।এতে ছেলে শিশুর তুলনায় মেয়ে শিশুর শরীরে সিসার উপস্থিতি বেশি দেখা গিয়েছে।
সিসা একটি শক্তিশালী 'নিউরোটক্সিন' যা শিশুদের শারীরিক,মানসিক ও মস্তিষ্কে অপূরনীয় ক্ষতি সাধন করে থাকে।
আইসিডিডিআরবি এর তথ্যানুযায়ী শিশুদের জন্য উৎপাদিত খেলনা, সব ধরনের রং, অ্যালুমিনিয়াম, সিলভারের হাড়ি পাতিল,সবজি, চাল এবং বাজারের মসলা সামগ্রীতে সীসার উপস্থিতি অকল্পনীয় ভাবে দেখা মিলেছে। যা সত্যিই দুঃখজনক ও আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ। গবেষকদের মতে, সিসা একটি ধীরগতির বিষক্রিয়া। যা শরীরে অবস্থানের ফলে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে অকেজো হয়ে যায়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার,শ্বাস-প্রশ্বাস ও গর্ভবতী মায়েদের মাধ্যমে শিশুদের শরীরে এ ক্ষতিকর সিসা প্রবেশ করে। মানবদেহে এ সিসার উপস্থিতি দ্বীর্ঘস্থায়ী হলে যকৃত, হৃদপিণ্ড, পরিপাক ও প্রজনন তন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে।
সিসা দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ও পরবর্তী প্রজন্মকে সীসার ভয়াল থাবা থেকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রিক মিডিয়াসহ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে সিসা দূষণ থেকে মানুষকে বিশেষ করে শিশুদেরকে সুরক্ষা দিতে সরকারকে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আইনের বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তবেই সীসার বিষক্রিয়া থেকে আমাদের কোমলমতি শিশুরা রক্ষা পেতে পারে।
মাহমুদুল হক হাসান
লেখক ও সংগঠক
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।