‘জগতের প্রত্যেক কাজে ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য’

- আপডেট সময় : ০৩:০৮:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩ ১৪০ বার পড়া হয়েছে

আল্লাহর সাহায্য মানে এই না যে, ঝড়-বৃষ্টি আসবে না।ঝড় বইবে, আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামবে ঠিকই, কিন্তু শত বাধা ও প্রতিকূলতার পরেও আপনি থেমে যাবেন না এটাই আল্লাহর সাহায্য।জীবন চলার পথে নানা বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আপনি এগিয়ে যাবেন এটাই আল্লাহর সাহায্য।
আর সর্বাবস্থায় আপনি ধৈর্যের সাথে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করে ভালো কিছুর জন্যে অপেক্ষা করবেন এটাই এক ধরনের আল্লাহর সাহায্য।সবাই ধৈর্য্য ধরতে পারে না, সবাই অপেক্ষা করতে পারেনা।
মানুষের মহৎ একটি গুণ সবর বা ধৈর্য। ধৈর্যশীল ব্যক্তি সর্বমহলে প্রশংসিত এবং মহান আল্লাহর কাছেও অতি পছন্দের পাত্র।আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ধৈর্যশীল ব্যক্তির প্রশংসা করেছেন।
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “আমি তাকে (আইয়ুব আঃ কে) ধৈর্যশীল পেয়েছি।সে কতই না উত্তম বান্দা।(সূরা সোয়াদ : ৪৪)”।
এই পৃথিবীতে যত নবী-রাসুল এসেছেন, প্রত্যেকেই ছিলেন ধৈর্য-স্থৈর্যের মূর্ত প্রতীক।ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের পরেই তারা নবুয়ত লাভে ধন্য হয়েছেন।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেছেন, “যে আল্লাহর ওপর নির্ভর করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই।নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।(সূরা আত-তালাক্ব: ৩)”।
” নিশ্চয় আল্লাহ (তার উপর) নির্ভরকারীদের ভালবাসেন। (সূরা আলে-ইমরান: ১৫৯)”।
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন।আর আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।(সূরা বাকারাহ: ২০১)”।
“হে আমাদের রব, আমরা নিজদের উপর যুলম করেছি।আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।(সূরা আ’রাফ: ২৩)”।
“হে আমাদের রব, আমাদেরকে আপনার পক্ষ থেকে রহমত দিন এবং আমাদের জন্য আমাদের কর্মকান্ড সঠিক করে দিন।(সূরা কাহফ: ১০)”।
“হে আমার রব, আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি।আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।(সূরা আম্বিয়া: ৮৩)”।
“হে আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই।আপনি পবিত্র মহান।নিশ্চয় আমি সীমালংঘনকারী।(সূরা আম্বিয়া: ৮৭)”।
কোরআন ও হাদিসে ধৈর্য্য ধারণের নির্দেশ যেমন রয়েছে, তেমনি তার অফুরন্ত প্রতিদান ও পুরস্কারের কথাও বর্ণিত হয়েছে বহু জায়গায়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং শত্রুর মোকাবিলায় দৃঢ়তা অবলম্বন করো। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক।তাহলে তোমাদের জীবনে সফলতা আসবে।(সূরা আলে ইমরান : ২০০)”।
আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, “ধৈর্যধারণকারীদের অপরিসীম পুরস্কার দেয়া হবে।(সূরা জুমা : ১০)”।
ধৈর্যের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ধৈর্যধারীর সঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ আছেন।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।(সূরা বাকারা : ১৫৩)”
আল্লাহর পক্ষ থেকে ধৈর্যশীলদের প্রতি রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ।পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, “আপনি সবরকারীদের জান্নাতের সুসংবাদ দিন।(সূরা বাকারা : ১৫৫)”।
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে, “তাদের ধৈর্যের কারণে জান্নাতে অট্টালিকা দেয়া হবে এবং তাদের সেখানে সালাম দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হবে।(সূরা ফোরকান : ৭৫)”।
হাশরের ময়দানে ঘোষণা করা হবে, “ধৈর্যশীলরা কোথায়? অতঃপর তাদের বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে।(তাফসিরে ইবনে কাসির)”।
মানুষের জীবন বিপদাপদের ঘূর্ণিপাকে আবর্তিত।জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি এই ক্ষুদ্র জীবনে মানুষকে ছোট-বড় বিভিন্ন বিপদাপদের মুখে পড়তে হয়।কোনো কোনো বিপদ পরীক্ষাস্বরূপ আর কোনো কোনো বিপদ শাস্তিস্বরূপ হয়ে থাকে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “তোমাদের যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে.
পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি এবং ফলফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে।তবে সবরকারীদের সুসংবাদ দাও।(সূরা বাকারা : ১৫৫)”।
তাই আল্লাহর সাহায্য লাভের উপায় হচ্ছে ধৈর্য ও ইবাদত।পবিত্র কোরআনের বলা হয়েছে, “তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।(সূরা বাকারা : ১৫৩)”।
জীবনে সফল হতে চাইলে ধৈর্যের বিকল্প নেই।ধৈর্যের পাহাড় মাড়িয়ে মানুষ সফলতার মুখ দেখে।তাই বলা হয়, সবরে মেওয়া মিলে।আল্লাহ আমাদের সকলকেই ধৈর্য্য ধারনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করুন।আল্লাহ সকলের মঙ্গল করুক।(আমিন)
মোঃ মমতাজ আলী শান্ত
বিবিএস (অনার্স)- ফার্স্ট ক্লাস, এমবিএস (মাস্টারর্স) ফার্স্ট ক্লাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।