দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। আসন্ন জাতীয় বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের চলমান বাজেটের তুলনায় ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আগামী বছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থ বছরের মতো সাড়ে ৭ শতাংশ প্রাক্কলনের কথা ভাবছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এর আকার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ কমানো হতে পারে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা শেষ করে বৈশ্বিক সংকটের কারণে অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝেই আরেকটি বড় বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরিকল্পনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারের কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার বিনিময় হারে অস্থিরতা, প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্স ও ভর্তুকির চাপ আগামী বাজেট প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মূল্যস্ফীতি সহনীয় রাখার লক্ষ্যকে বিবেচনায় রেখে নতুন অর্থবছরের বাজেটে বহুমুখী পদক্ষেপ থাকার আভাস পাওয়া গেছে। এ বছর মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে এই হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান কবে হবে, তা কেউই বলতে পারছে না। ফলে আগামী বছরও উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা থাকবে। সে জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৮৬ হাজার কোটি টাকা হলেও আগামী বছরে সেই পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আগামী বাজেটের ঘাটতি চলতি বছরের মতোই ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সরকারের আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি নির্ধারণ করা আছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে এনবিআরের দায় রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, আগামী নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বাড়ানো হতে পারে এ খাতে ভাতার পরিমাণও। একই সঙ্গে বাড়বে কৃষি প্রণোদনা ও কৃষি ভর্তুকির পরিমাণও। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হলেও তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। গত কয়েক বছরের মতো আগামী নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ থাকতে পারে ৬ শতাংশ। বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ পাওয়ার টার্গেট ও সম্ভাবনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চলতি অর্থবছরের মতো সাড়ে ৭ শতাংশ প্রাক্কলনের কথা ভাবছেন তিনি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন নির্বাচনি আসনে উন্নয়ন কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখার প্রস্তাব করা হতে পারে। অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবে জাতীয় সংসদ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনও পরিস্থিতিতেই দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আবার ব্যয়ও কমানো যাবে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে কৌশলপূর্ণ একটি বাজেট করতে হবে।’