নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪০টি।এর মধ্যে ২৬টি পদ শূন্য রয়েছে।কর্মরত আছেন মাত্র ১৪ জন চিকিৎসক।তাদের বেশির ভাগের আবার আবাসন সঙ্কট।এতে নড়াইলের জনগোষ্ঠী আধুনিক ও সুষ্ঠু স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
হাসপাতালে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চর্ম, চক্ষু, রেডিওলজিসহ বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসক নেই।যে কারণে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।সার্জারি ও গাইনি বিভাগে সিনিয়র কনসালটেন্টের পদও খালি।জুনিয়র মেডিকেল অফিসারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জোড়াতালি দিয়ে।
হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক, রেডিওলজি বিভাগ কার্যকর থাকলেও জনবল আরও বাড়লে রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব ও মান আরও বাড়ানো যাবে।
হাসপাতালের এক্সরে বিভাগে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি চালু থাকলেও সিআর মেশিনটি নষ্ট।যার কারণে বিভাগটি চলছে জোড়াতালি দিয়ে।অন্য বিভাগগুলোতেও দৈন্যদশা বিরাজ করছে।
এদিকে রোগীদের চিকিৎসা নেয়া এখন কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে।রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য বিভাগ ও হাসপাতালে বেশিরভাগ কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে।যার কারণে হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।আউট সোর্সের মাধ্যমে সম্প্রতি কিছু লোক দিয়ে হাসপাতাল পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, নড়াইলের আধুনিক সদর হাসপাতালের প্রস্তাবিত বেড সংখ্যা ২৫০টি।বাস্তবে কার্যকর আছে একশ’টি।অথচ প্রতিদিন গড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি হন।আবার বহির্বিভাগেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।এখন দিনে কমপক্ষে ১ হাজার থেকে ১২শ’ রোগীর চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়।
নড়াইল জেলা শহরে প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র সরকারি আধুনিক হাসপাতাল।মেডিকেল কলেজ নেই।প্রাইভেট কিছু ক্লিনিক আছে।সেখানে গরিব রোগীদের চিকিৎসা নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।এই জেলার জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ।সেখানে গ্রামগঞ্জের দরিদ্র রোগীদের এই সরকারি হাসপাতালটিই আস্থার জায়গা।
হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৪০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ থাকলেও অধিকাংশ সিনিয়র ডাক্তারের পদ শূন্য।এসব শূন্য পদ পূরণ না হওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।হাসপাতালে নতুন করে একটি ভবন তৈরি করা হয়েছে।গত বছরেরে জুনে তা হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনও তা হস্তান্তর করা হয়নি।কবে হস্তান্তর করা হবে সেটাও অনিশ্চিত।
হাসপাতালে ডাক্তারদেরও আবাসন সমস্যাও প্রকট।যার কারণে সেখানে ডাক্তাররা থাকতে চান না।দূর থেকে গিয়ে হাসপাতালে ডাক্তাররা ডিউটি করেন।আবার চলে যান।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নড়াইলে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়ে গেছে।যার কারণে আর্থিকভাবে সচ্ছল জটিল রোগীরা ওই সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে এখন রাজধানীতে গিয়ে চিকিৎসা নেন।আর গ্রামগঞ্জের অসহায় দরিদ্র রোগীদের একমাত্র আস্থার জায়গা সদর হাসপাতালটির করুন অবস্থায় দরিদ্র রোগীরা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় হাসপাতালের কিছু নার্স স্টাফ রোগীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন।তাদের ব্যবহারে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।অনেকেই কর্মস্থলে বসে রোগীদের খোঁজ না নিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে রোগী এবং স্বজনরা অভিযোগ করেন।
হাসপাতলে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী বলেন, হাসপাতালে একদিকে বেড সংকট অন্যদিকে ডাক্তারও কম এজন্য চিকিৎসা ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না।
নড়াইলের নিম্নবিত্ত মানুষ এ হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।কিন্তু এখানে এসে চিকিৎসাসেবা পেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।এই সমস্যার যাতে দ্রুত সমাধান হয় এমনটাই দাবী তাদের।
নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের সুপার ডা. আবদুল গফফার জানান, সম্প্রতি তিনি ওই হাসপাতালে যোগদান করেছেন।সেখানে জনবলে অভাবের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা কষ্টকর ছিল।
তিনি জানান, নড়াইলের স্থানীয় সরকার দলীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমস্যাগুলো জানানো হয়েছে।প্রতি মাসে সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।এখনও জনবল বাড়ানো হয়নি। বাড়ালে রোগীরা উপকৃত হবে বলেও জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ নিহাল খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম মেনে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।